যারা এতদিন পর্যন্ত জন্ম সার্টিফিকেট বানায়নি তাদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর জন্ম সনদ নিয়ে নতুন গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। এই নিয়ম অনুযায়ী সকলকে এবার বানাতে হবে ডিজিটাল জন্ম সার্টিফিকেট। এই পরিবর্তনের ফলে জন্ম সনদ সংশোধন বা নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় বড়সড় রদবদল আনা হয়েছে। এর ফলে যাদের নাম বা অন্য কোন ভুল রয়েছে সেগুলো সংশোধন করে নিতে পারবেন। আগে অনেক ক্ষেত্রে সহজেই নাম পরিবর্তন করা যেত, কিন্তু এখন থেকে নির্দিষ্ট শর্ত ছাড়া এই সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। নতুন করে জন্ম সার্টিফিকেট বানানোর ক্ষেত্রেও এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। সরকারের দাবি, ভুয়া নথি ব্যবহার, দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক গাফিলতি বন্ধ করতেই এই নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কেন জন্ম সনদ এত গুরুত্বপূর্ণ?
জন্ম সনদ শুধু জন্মের প্রমাণপত্র নয়, এটি নাগরিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অপরিহার্য নথি।
- শিক্ষা: যে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে স্কুলে ভর্তি, পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করতে জন্ম সনদ লাগে।
- সরকারি পরিষেবা: যে কোন সরকারি কাজকর্মে বা সরকারি পরিষেবা পেতে যেমন আধার, প্যান, ভোটার কার্ড পেতে জন্ম সনদ প্রয়োজন।
- আইনি প্রমাণ: বর্তমান নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য জন্ম সার্টিফিকেট একটি অন্যতম প্রধান নথি।
- পাসপোর্ট ও ভিসা: আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য জন্ম সনদ বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে পাসপোর্ট বানানোর জন্য জন্ম সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
অতএব, জন্ম সনদে কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধন করা জরুরি। আর সেই প্রক্রিয়াতেই এবার এসেছে বড় পরিবর্তন। তাই যারা যারা এখনো জন্ম সার্টিফিকেট বানাননি বা জন্ম সার্টিফিকেটের ভুল রয়েছে তারা দ্রুত ঠিক করে নিতে পারে।
নতুন নিয়মের মূল দিক
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, জন্ম সনদে নাম পরিবর্তন বা সংশোধন কেবল নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতেই অনুমোদিত হবে।
১. এক্ষেত্রে জন্মের সময় যদি কারো নাম রেজিস্টারে না থাকে তাহলে পরবর্তীকালে বৈধ নথি দিয়ে নাম পরিবর্তন করা যাবে নতুন করে বানানো যায়।
২. শুধুমাত্র ছোটখাটো বানান ভুল বা টাইপোগ্রাফিক্যাল ভুল থাকলে অভিভাবকের পরিচয়পত্র ও প্রমাণপত্র জমা দিয়ে সংশোধন করা যাবে।
৩. যদি কোনো ব্যক্তি ভুয়া কাগজপত্র জমা দেয়, তবে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি ভুয়ো দিলে জেল পর্যন্ত হতে পারে।
জন্ম সনদে সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি
নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী জন্ম সনদ সংশোধন বা ডিজিটাল জন্ম সনদ পেতে যেসব নথি লাগবে:
- জন্ম সনদের আসল কপি
- অভিভাবকের পরিচয়পত্র (আধার/ভোটার কার্ড)
- ঠিকানার প্রমাণপত্র
- হাসপাতালের জন্ম রিপোর্ট বা ডাক্তারের সার্টিফিকেট
- আদালতের আদেশ বা কোর্ট এফিডেভি যদি পুরনো কেউ নতুন করে বানায় (বিশেষ ক্ষেত্রে)
পুরনো হাতে লেখা জন্ম সনদ ডিজিটালাইজ করার ধাপ
বর্তমানে হাতে লেখা জন্ম সনদ অনেক ক্ষেত্রে বৈধ নয়। তাই পুরনো জন্ম সনদ ডিজিটাল সনদে রূপান্তর করা জরুরি।
১. প্রাথমিক যাচাই – পুরনো জন্ম সনদ এবং বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস রেডি রাখুন।
২. স্থানীয় অফিসে যান – পৌরসভা/গ্রাম পঞ্চায়েত/ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসে যোগাযোগ করুন।
৩. আবেদন ফরম পূরণ করুন – “Duplicate/Computerized Birth Certificate” ফরম সংগ্রহ করুন। এবং অনলাইনে আবেদন করুন।
৪. প্রয়োজনীয় নথি জমা দিন – পুরনো জন্ম সনদ, পরিচয়পত্র ও ঠিকানার কাগজ জমা দিন।
5. ফি প্রদান করুন – সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আবেদন করতে পারবেন।
6. ডিজিটাল জন্ম সনদ সংগ্রহ করুন – সবকিছু ঠিক থাকলে হাতে QR কোডযুক্ত ডিজিটাল জন্ম সনদ দেওয়া হবে। আবেদন করার কয়েকদিন পরেই হাতে পেয়ে যাবেন।
কেন নতুন ডিজিটাল জন্ম সনদ জরুরি?
বর্তমান দিনের পুরনো হাতে লেখা জন্ম সনদ আর কোন কাজে লাগে না এছাড়াও জালিয়াতি রোধে নতুন ডিজিটাল সনদে QR কোড থাকে। আধার, প্যান, পাসপোর্টের জন্য ডিজিটাল জন্ম সনদ অপরিহার্য। বিদেশ ভিসা ও উচ্চশিক্ষার জন্য ডিজিটাল সনদ বাধ্যতামূলক।আধুনিক প্রক্রিয়ায় হাতে লেখা সনদ গ্রহণযোগ্য নয়।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই পদক্ষেপ মূলত প্রশাসনিক জটিলতা ও ভুয়া নথির অপব্যবহার রোধের জন্য। ইতিমধ্যে দেখা গিয়েছে প্রচুর ভুয়ো জন্ম সনদ বানানো হয়েছে। সরকারের দাবি, এখন থেকে জন্ম সনদ শুধুমাত্র সঠিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই পরিবর্তন বা সংশোধন হবে। এর ফলে নাগরিকদের কাছে জন্ম সনদ হবে আরও নির্ভরযোগ্য ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জন্ম সনদ সম্পর্কিত এই নতুন নিয়ম প্রশাসনিক স্বচ্ছতা আনবে এবং ভুয়া পরিবর্তনের অপব্যবহার বন্ধ করবে। এর ফলে নতুন করে জন্ম সনদ বানানোর জন্য বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট থাকতে হবে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে নাগরিকদের অসুবিধা হতে পারে। তাই এখনই পুরনো হাতে লেখা জন্ম সনদকে ডিজিটাল সনদে রূপান্তর করা জরুরি। নতুন প্রজন্মের জন্য এই নথি কেবল জন্মের প্রমাণ নয়, নাগরিকত্ব থেকে শিক্ষা ও পাসপোর্ট পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে উঠবে।

The articles on rgssmilezone.in are written and managed by the RGSSmileZone News Team.
We are a group of passionate writers, editors, and reporters dedicated to delivering accurate, reliable, and unbiased news to our readers.
