বর্তমান সময়ের পাসপোর্ট হল সব থেকে বড় একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। আগের থেকে বর্তমানে পাসপোর্ট এর গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। আগে যেখানে পাসপোর্টকে শুধুমাত্র ভ্রমণের নথি হিসেবে দেখা হতো, এখন সেটি পরিচয় প্রমাণ হিসেবেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। পাসপোর্ট থাকলে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের পাশাপাশি এটি নাগরিকত্ব, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরির সুযোগ এবং বিভিন্ন সরকারি নথির ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও বর্তমান নাগরিকত্ব প্রমাণের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট এর গুরুত্ব সব থেকে বেশি। যদি কারো পাসপোর্ট থেকে থাকে তাহলে তার ভোটার তালিকার সংশোধন বা নাগরিকত্ব প্রমাণের কোন বাধা থাকবে না।

এবার পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রেও এল বিশাল বড় পরিবর্তন। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ভারত সরকার পাসপোর্ট পরিষেবায় এনেছে এক নতুন রূপ—ই-পাসপোর্ট (E-Passport)। এবার আপনি ঘরে বসেই আপনার ইচ্ছামত পাসপোর্ট বানিয়ে নিতে পারবেন এর জন্য আর আপনাকে ও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো, বারবার অফিসে যাওয়া কিংবা কাগজপত্র নিয়ে ঝক্কি পোহাতে হবে না। বর্তমান ডিজিটাল যুগের সবকিছুই ঘরে বসে করা সম্ভব। কয়েকটি সহজ ধাপ মেনে ঘরে বসেই আবেদন করা যাবে এবং হাতে পাওয়া যাবে আধুনিক, নিরাপদ ও আন্তর্জাতিক মানের পাসপোর্ট।

ই-পাসপোর্ট কী?

বর্তমান যুগের সব কিছুই ঘরে বসে করা সম্ভব এর পাশাপাশি আপনি আপনার মোবাইলে মাধ্যমে বানাতে পারবেন এই ই-পাসপোর্ট। যেটি সব জায়গায় কাজে লাগবে এবং এটি আপনি আপনার মোবাইলে রেখেই সমস্ত কাজকর্ম করতে পারবেন। আপনার কাছে যদি এই ই-পাসপোর্ট থেকে থাকে তাহলে এর মধ্যে থাকবে একটি ইলেকট্রনিক চিপ। এই চিপের মধ্যেই আপনার সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত থাকবে। এর ফলে এটি আর জালিয়াতি হওয়ার কোন ভয় থাকবে না এবং একদম সম্পূর্ণ নিরাপদ হবে। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে চেকপোস্ট সমস্ত জায়গায় এই ই পাসপোর্ট ব্যবহার করা যাবে।

কেন ই-পাসপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ?

ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার ফলে সাধারণ নাগরিকরা পাচ্ছেন একাধিক সুবিধা—

  1. জালিয়াতি প্রতিরোধ – বায়োমেট্রিক তথ্য থাকায় নকল করা কঠিন। এর ফলে আর পাসপোর্ট জালিয়াতের ভয় থাকবে না।
  2. আন্তর্জাতিক মান – বিদেশি ভিসা বা অভিবাসন প্রক্রিয়ায় এটি স্বীকৃত। তাই আপনি এটি দেশ-বিদেশ সব জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন।
  3. ডিজিটাল সুবিধা – ঘরে বসেই আবেদন, অনলাইনে স্ট্যাটাস চেকের সুবিধা। ঘরে বসেই আপনি সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যাবেন এবং ঘরে বসেই আপনি এই পাসপোর্ট বানিয়ে নিতে পারবেন।
  4. দ্রুত প্রক্রিয়া – আগের তুলনায় অপেক্ষার সময় কম। দ্রুত আপনি আবেদন জানিয়ে এই পাসপোর্ট পেতে পারেন এবং খুব ইমারজেন্সি হলে এক সপ্তাহের মধ্যে হাতে পেয়ে যাবেন।
  5. পরিচয় প্রমাণ – নাগরিকত্বের আধুনিক ডিজিটাল প্রমাণ হিসেবে কার্যকর। বর্তমানে নাগরিকত্ব প্রমাণের সবথেকে বড় নথি হলো এই পাসপোর্ট।

আবেদন করতে যেসব ডকুমেন্টস প্রয়োজন

ই-পাসপোর্টের আবেদন করার আগে প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুত রাখা জরুরি। আবেদন প্রক্রিয়া মসৃণ করতে নিচের কাগজপত্র প্রয়োজন হবে—

  • পরিচয় পত্র হিসেবে আধার কার্ড ভোটার কার্ড বা ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • স্থায়ী বাসিন্দা প্রমাণপত্র হিসেবে রেশন কার্ড বা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
  • জন্ম সার্টিফিকেট
  • অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট

আবেদন ফি কত?

আপনি যদি পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করেন তাহলে সাধারণত সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ফি প্রায় ₹১৫০০ থেকে শুরু হয়। তবে তত্‍কাল বা জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে ফি কিছুটা বেশি হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি আবেদনের আগে সমস্ত তথ্য ভালোভাবে যাচাই করে দেখে নিতে পারেন।

পাসপোর্টের ধরন

আপনি যদি পাসপোর্ট বানাতে চান তাহলে এর আগে আপনাকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে পাসপোর্টের সাধারণ ধরন। বিভিন্ন ধরনের পাসপোর্ট হয়ে থাকে এখন আপনি কোনটি বানাবেন সেটি সম্বন্ধে নিচে জেনে নিন-

  1. সাধারণ পাসপোর্ট – সাধারণ নাগরিকদের জন্য, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হয়।
  2. তত্‍কাল পাসপোর্ট – জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত ইস্যু করা হয়।
  3. অফিশিয়াল/ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট – সরকারি কর্মচারী বা সরকারি কাজে বিদেশগামীদের জন্য।

নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ধরনের পাসপোর্ট বেছে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

আবেদন প্রক্রিয়া

ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার জন্য আপনাকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। যারা যারা এখানে আবেদন করতে চান তাদের সুবিধার্থে নিচে আবেদনের ধাপগুলো আলোচনা করা হলো—

  1. অনলাইনে আবেদন জমা – সরকারিভাবে নির্ধারিত পোর্টালে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করুন। এক্ষেত্রে আপনি বাড়িতে বসে অনলাইনের মাধ্যমেই আবেদন জানাতে পারবেন।
  2. অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং – সুবিধাজনক তারিখ ও সময় বেছে নিয়ে বুকিং করুন। এরপরেই আপনি আপনার সময় মত এপয়েন্টমেন্ট বুকিং করে ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশনের জন্য যেতে পারেন পাসপোর্ট অফিসে।
  3. ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন – নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হয়ে অরিজিনাল ডকুমেন্ট দেখাতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার সমস্ত অরজিনাল ডকুমেন্টস নিয়ে যেতে হবে।
  4. বায়োমেট্রিক রেকর্ডিং – ছবি, আঙুলের ছাপ ও স্বাক্ষর নেওয়া হবে। এখানে আপনাকে স্বয়ং উপস্থিত থাকতে হবে এবং আপনার সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
  5. স্ট্যাটাস ট্র্যাকিং – আবেদন জমা দেওয়ার পর অনলাইনে ট্র্যাক করে দেখতে পারবেন কতদূর অগ্রগতি হয়েছে।
  6. পাসপোর্ট বিতরণ – সবকিছু ঠিক থাকলে কুরিয়ারের মাধ্যমে আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে ই-পাসপোর্ট। এই পাসপোর্ট নিয়ে এরপর আপনি আপনার সমস্ত কাজকর্ম করে নিতে পারবেন।

ই-পাসপোর্ট কেবল একটি আধুনিক ভ্রমণ নথি নয়, বরং নিরাপদ ও ডিজিটাল যুগের নাগরিকত্বের প্রমাণ। কিছুদিন পরেই পশ্চিমবঙ্গের শুরু হতে যাচ্ছে ভোটার তালিকা সংশোধন ও নাগরিকত্ব প্রমাণের NRC। এর ফলে আপনি ঘরে বসে এই পাসপোর্ট বানিয়ে নিলে আপনার আর কোন চিন্তা থাকবে না। আগের মতো দালাল, ঘুষ কিংবা দীর্ঘ লাইনের ঝামেলা নেই। বাড়িতে বসেই আবেদন করা যাবে, অনলাইনে স্ট্যাটাস ট্র্যাক করা যাবে, এবং হাতে পাওয়া যাবে বিশ্বমানের পাসপোর্ট।

সংক্ষেপে বলতে গেলে , ই-পাসপোর্ট সাধারণ নাগরিকদের জীবনকে করেছে আরও সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ। ভবিষ্যতে প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের জন্য এটি হবে অপরিহার্য ভ্রমণ নথি।