বাংলায় সরকারি পরিষেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার গত ২ আগস্ট থেকে চালু করেছে এক বিশেষ কর্মসূচি— “আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান”। তিন মাসব্যাপী এই প্রকল্প চলবে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। অল্প সময়েই এই কর্মসূচি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্রথমে ২৭ হাজার ক্যাম্পের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হলেও মাত্র ২৬ দিনেই এক কোটিরও বেশি মানুষ শিবিরে হাজির হওয়ায় ক্যাম্পের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৩৭৭-এ। প্রশাসনের মতে, প্রয়োজন পড়লে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এখনো যদি আপনার এলাকায় আমার পাড়া আমার সমাধান কর্মসূচি না এসে থাকে তাহলে জেনে নিন কবে আপনার এলাকায় বসতে চলেছে। এখানে সমস্ত ধরনের সরকারি কাজকর্ম করা হয় এবং বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের আবেদন গ্রহণ করা হয়।

উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য
এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হলো— সাধারণ মানুষ যেন পাড়ায় বসেই তাঁদের সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে পান। আগে যেখানে সরকারি দফতরে গিয়ে বহু ঘুরতে হতো, এখন পাড়াতেই শিবির বসছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সরাসরি প্রশাসনের প্রতিনিধিদের কাছে তাঁদের চাহিদা, অভিযোগ ও প্রস্তাব জানাচ্ছেন।
মানুষ কী কী সমস্যা তুলছেন শিবিরে
প্রথম দফার অভিজ্ঞতা বলছে, সাধারণ মানুষের দাবি মূলত দৈনন্দিন জীবনের মৌলিক প্রয়োজনের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন— লক্ষী ভান্ডার আবেদন, রাস্তার আলো স্থাপন বা মেরামত,পানীয় জলের জন্য টিউবওয়েল বসানো বা পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ,নিকাশি নালা নির্মাণ বা সংস্কার,কমিউনিটি টয়লেট তৈরি,খেলার মাঠ নির্মাণ,অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ছাদ মেরামতি, কৃষক বন্ধুর আবেদন আরো সমস্ত সরকারি পরিষেবা এইভাবে প্রায় ১৫ ধরনের কাজকে অগ্রাধিকার দিয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
অগাস্ট মাস জুড়ে শিবিরগুলিতে দেখা গেছে ব্যাপক ভিড়। প্রশাসনের হিসাবে, মাত্র ২৬ দিনেই ১ কোটি মানুষ হাজির হয়েছেন। এতে স্পষ্ট যে মানুষ সরাসরি নিজেদের সমস্যা জানাতে এবং তার সমাধান চাইতে আগ্রহী। অনেক গ্রামাঞ্চলে আগে যেখানে ছোটখাটো সমস্যা অবহেলায় পড়ে থাকত, সেখানে এখন স্থানীয় মানুষরাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কোন প্রকল্প আগে হবে।
প্রতিটি শিবিরে সাধারণ মানুষ নিজেদের সমস্যা লিখিত আকারে জানাচ্ছেন। প্রশাসনের প্রতিনিধি ও পঞ্চায়েত সদস্যরা সেগুলো নথিভুক্ত করছেন। তারপর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি হচ্ছে। এরপরেই সকলের সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কোনও এলাকায় যদি পানীয় জলের তীব্র সমস্যা থাকে, তাহলে সেখানে পাইপলাইন প্রকল্পকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, কোনও এলাকায় রাস্তার আলো না থাকলে সেদিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে।
“আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান” শুধু একটি সরকারি প্রকল্প নয়, বরং স্থানীয় প্রশাসনকে আরও গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ করার এক প্রয়াস। এখানে সরাসরি নাগরিকরাই প্রকল্প বাছাই করছেন। আগে যেখানে সিদ্ধান্ত হত উপরের দিক থেকে, এখন নিচু স্তর থেকে চাহিদা উঠে আসছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যকারিতা অনেকটাই বাড়বে।
শিবিরগুলিতে নারীদের অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মতো। বহু জায়গায় মহিলারা নিজেরা এসে জানিয়েছেন, তাঁদের এলাকায় শৌচালয় বা পানীয় জলের অভাব আছে। প্রবীণ মানুষরা জানিয়েছেন, তাঁদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাস্তা মেরামত দরকার। এইভাবে ভিন্ন ভিন্ন বয়স ও শ্রেণির মানুষ সরাসরি মতামত জানাচ্ছেন।
রাজ্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এত অল্প সময়ে এত মানুষের উপস্থিতি তাঁদেরও অবাক করেছে। তাঁরা মনে করছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হচ্ছে যে এই কর্মসূচির মাধ্যমে সত্যিই তাঁদের সমস্যার সমাধান সম্ভব। এজন্যই প্রথমে ২৭ হাজার ক্যাম্পের পরিকল্পনা থাকলেও তা বাড়িয়ে ৩১ হাজার ৩৭৭ করা হয়েছে।
৩ নভেম্বর পর্যন্ত শিবির চলবে। এরপর সমস্ত অভিযোগ ও দাবি খতিয়ে দেখা হবে। নির্বাচিত প্রকল্পগুলির জন্য অর্থ বরাদ্দ ও কাজের রূপরেখা তৈরি হবে। অনেকের মতে, এই কর্মসূচি যদি সাফল্যের সঙ্গে এগোয়, তবে তা বাংলার উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায় রচনা করবে।
“আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান” শিবির এখন আর শুধু প্রশাসনিক কর্মসূচি নয়, বরং মানুষের প্রত্যাশা ও আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। মানুষ তাদের সমস্ত সমস্যার কথা এখানে তুলে ধরতে পারবেন এবং খুব সহজেই সমাধান হয়ে যাবে। শহর থেকে গ্রাম— সর্বত্র মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন এই শিবিরে। নিজেদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন, সমাধানের পথ খুঁজছেন। অল্প সময়েই এক কোটির বেশি মানুষ এতে অংশ নিয়েছেন, যা স্পষ্ট করে দিচ্ছে— বাংলার সাধারণ মানুষ পরিবর্তনের নতুন আশা খুঁজছেন এই উদ্যোগের মধ্যে দিয়েই।

The articles on rgssmilezone.in are written and managed by the RGSSmileZone News Team.
We are a group of passionate writers, editors, and reporters dedicated to delivering accurate, reliable, and unbiased news to our readers.
